টম ব্রাডলি বলেছেন ‘তুমি নিজে না চাইলে তোমাকে কেউ তোমার স্বপ্নের পথ থেকে সরাতে পারবে না’। তেমনিভাবে জন্মগতভাবে দুই পা দুই হাত না থাকলেও আলিফ আহমেদকে স্বপ্নের পথ থেকে সরাতে পারেনি কেউ। জীবনে বড় কিছু অর্জন করার সংকল্প তাকে পেছনে ফেলে আসার সাহস পায়নি। পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে তার কাছে। প্রতিবন্ধী হিসেবে কারো কটুবাক্য কিংবা মমতাহীন দৃষ্টিতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। স্বপ্ন তার সুদূরপ্রসারী। দুই পা দুই হাত না থাকলেও মানসিক মনোবল তার স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন আলিফ। হাত পা না থাকলেও বন্ধুদের সহায়তায় হুইল চেয়ারে করে এসেছেন তিনি। তার সঙ্গে আসা চার বন্ধুর মধ্যে রয়েছেন নাফিউল, অর্ণব, রাজিন এবং নাইম। সবাই একই স্কুল-কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন।
জানা যায়, আলিফ আহমেদের জন্ম বগুড়ার পাইকারপাড়া এলাকায়। বগুড়ার পুলিশ লাইন্স হাইস্কুল বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমমিক এবং সরাসরি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। দুই পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ ফাইভ। বাবা মা দুজনেই সরকারি চাকরিজীবী। বর্তমানে থাকছেন ঢাকার সাভারে।
জন্মের পর থেকে সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে আলিফের বাবা মাকে। তবে কখনও ভেঙে পড়েননি তারা। আলিফের দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি করে সাধ্যের সবটুকু চেষ্টা করেন বাবা মা। ফলস্বরূপ আলিফ দিয়েছেন সেরা রেজাল্ট। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক দুটোতে জিপিএ ফাইভ রয়েছে তার।
আলিফ আহমেদ বলেন, আমি সবসময়ই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি। আমার সীমাবদ্ধতা কখনো ভাবায় না। সেদিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। আমি স্বপ্ন দেখতে এবং পূরণের জন্য চেষ্টা করি। বাবা মায়ের সহযোগিতা না পেলে এসব কিছুই সম্ভব হতো না। তারা পাশে আছেন বলেই এতটুকু আসার সুযোগ হয়েছে। তাদের খুশি মুখ দেখতে প্রার্থনা করি যেন ভালো কিছু করতে পারি।
আলিফ জানান, এক্ষেত্রে আমার বন্ধুরা সবসময় সহায়তা করেছে। তারা না থাকলে একা কোথাও যাওয়া আসা কষ্টসাধ্য ব্যাপার আমার জন্য। ঘর থেকে বের হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে তারা আমাকে সহায়তা করেছে। শুধু এখন না, আগে থেকেই তারা আমাকে সহায়তা করে আসছে। এরাই সত্যিকারের বন্ধু আমার কাছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
কিভাবে পরীক্ষায় লিখেন এমন প্রশ্নে আলিফ বলেন, দুই হাত একসাথে করে কলম চেপে ধরে লিখতে পারি। সময় বেশি লাগে পাশাপাশি কষ্ট হলেও দু:খ নেই।
আলিফের ইচ্ছে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স করার। স্বপ্ন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে প্রয়োজনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথাও জানান তিনি।
আলিফের সঙ্গে আসা বন্ধু নাইম বলেন, আমরা সবাই একই কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। স্কুলও সবার একই ছিলো। তখন থেকেই আলিফকে আমরা কাছের করে নিয়েছি। সে আমাদের সঙ্গে পড়াশোনা, আসা যাওয়া সবকিছুই করে। এক্ষেত্রে আমরা সবাই মিলে তাকে সহায়তা করি। তার থেকেই আমাদের সবার অনুপ্রেরণা। সে পারলে কেন আমরা পারব না।